নভেম্বর মাস ১৯৭১, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দিবস ভিত্তিক ঘটনাপ্রবাহ

নভেম্বর মাস ১৯৭১ ১ , বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দিবস ভিত্তিক ঘটনাপ্রবাহ , মুক্তিযুদ্ধ হলো ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত একটি বিপ্লব ও সশস্ত্র সংগ্রাম।

পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থান ও স্বাধিকার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এবং বাঙালি গণহত্যার প্রেক্ষিতে এই জনযুদ্ধ সংঘটিত হয়।  যুদ্ধের ফলে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। পশ্চিম পাকিস্তান-কেন্দ্রিক সামরিক জান্তা সরকার ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে মার্চ রাতে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনা করে এবং নিয়মতান্ত্রিক গণহত্যা শুরু করে।

এর মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী সাধারণ বাঙালি নাগরিক, ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং পুলিশ ও ইপিআর কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়। সামরিক জান্তা সরকার ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলকে অস্বীকার করে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই ডিসেম্বর পশ্চিম পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।

 

Table of Contents

নভেম্বর মাস ১৯৭১ , বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দিবস ভিত্তিক ঘটনাপ্রবাহ

 

নভেম্বর মাস ১৯৭১ ১ , বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দিবস ভিত্তিক ঘটনাপ্রবাহ

 

নভেম্বর মাস ১৯৭১ ১ , বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দিবস ভিত্তিক ঘটনাপ্রবাহ

ভারতের ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী ফেনীর বিলোনিয়া অঞ্চলের পরশুরামের বিরাট এলাকা ১০ নভেম্বর মুক্ত হয়। মুক্তিবাহিনীর ২ নম্বর সেক্টরের বিলোনিয়ায় যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধারা গোটা এলাকাটি মুক্ত করতে নভেম্বরের শুরু থেকে আক্রমণ বাড়িয়ে দেন। ৭ নভেম্বর রাতে পাকিস্তানি সেনারাও তীব্র পাল্টা আক্রমণ করে।

মুক্তিযোদ্ধারা ভারতীয় গোলন্দাজ বাহিনীর সহায়তায় তাদের জবাব দিতে থাকেন। ৮ থেকে ১০ নভেম্বর দুই পক্ষে কয়েকবার মুখোমুখি যুদ্ধ হয়।

পাকিস্তানিরা অপ্রতিরোধ্য আক্রমণের মুখে চারটি জেট দিয়ে গোলাবর্ষণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা অবশেষে পাকিস্তানিদের দক্ষিণে ফুলগাজীর দিকে হটিয়ে দেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নভেম্বর মাস | ধারাবাহিক পর্ব নভেম্বর ( )

পশ্চিম জার্মানির চ্যান্সেলর উইলি ব্রান্ট ১১ নভেম্বর বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশের শান্তি ও স্থায়িত্বের জন্য বাংলাদেশ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান দরকার।

এরপরই ভারত থেকে শরণার্থীরা বাংলাদেশে ফিরতে পারবেন। পশ্চিম জার্মানি সফরে আসা ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বাংলাদেশ সমস্যা নিয়ে দুই দিনের আলোচনার পর এই বক্তব্য দেন তিনি।
বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে পশ্চিম জার্মানি গভীরভাবে বিচলিত বোধ করছে বলেও উল্লেখ করেন উইলি ব্রান্ট।

একই সঙ্গে তিনি ঘোষণা দেন, জাতিসংঘের উদ্যোগে শরণার্থী ত্রাণে তাঁর দেশ আরও অর্থসহায়তা দেবে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নভেম্বর মাস | ধারাবাহিক পর্ব নভেম্বর ( )

ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সভাপতি মাওলানা ভাসানী ১২ নভেম্বর বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর (যুক্তরাজ্য ও বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের দূত) কাছে লেখা এক চিঠিতে ভারত তাঁকে গৃহবন্দী করে রেখেছে বলে যে প্রচার চলছে, তা দুরভিসন্ধিমূলক বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, চলাফেরার পূর্ণ স্বাধীনতা তিনি ভোগ করছেন। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি প্রকাশ্যে চলাফেরা নিরাপদ বলে মনে করছেন না। চিঠিতে বাঙালি শরণার্থীদের জন্য ভারত সরকারের নিঃস্বার্থ সহায়তার জন্য তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

মুক্তিযুদ্ধের এই সময় এসে ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামকে সমর্থন করায় চীনের বাংলাদেশবিরোধী নীতির সমর্থক এবং মাওলানা ভাসানীর কিছুসংখ্যক চীনপন্থী অনুসারী ভারতের বিরুদ্ধে নানা প্রচার শুরু করে। তারা বলে, বাংলাদেশকে উপনিবেশে পরিণত করাই ভারতের উদ্দেশ্য। এই প্রচারণায় তারা ভাসানীর নাম ব্যবহার করে বলে, মুক্তিযুদ্ধের অগ্রগতি রোধ করতে ভারত ভাসানীকে কার্যত গৃহবন্দী করে রেখেছে। এ পটভূমিতে ভাসানী চিঠিটি লেখেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নভেম্বর মাস | ধারাবাহিক পর্ব নভেম্বর ( )

 

তিন সপ্তাহের বিদেশ সফর শেষে ১৩ নভেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে নেমে সাংবাদিকদের বলেন, যুদ্ধ ছাড়া বাংলাদেশ সমস্যার সমাধান সম্ভব কি না, সেটাই এখন প্রশ্ন। রাজনৈতিক সমাধান অবশ্যই বাংলাদেশের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই শুধু কোনো প্রস্তাব গ্রহণ বা অগ্রাহ্য করতে পারেন। শেখ মুজিবকে আলোচনায় ডাকা না হলে বাংলাদেশের নেতারা ইয়াহিয়ার সঙ্গে আদৌ কথা বলবেন কি না, তাতে সন্দেহ আছে।

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার রাজনৈতিক কমিটিতে ১৪ নভেম্বর পাকিস্তানের হুমকির কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতির পর্যালোচনা করা হয়। মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অনুপস্থিতিতে দেশে সংঘটিত ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ পেশ করেন।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর সহকর্মীদের বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক সমাধানে ইয়াহিয়া খানকে রাজি করতে পশ্চিমা নেতারা কতটা সাফল্য পাবেন, সে ব্যাপারে তাঁর সংশয় আছে।
বৈঠকটি নিয়ে দ্য টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মন্ত্রিসভার রাজনীতিবিষয়ক কমিটির সভায় ইন্দিরা গান্ধী বলেন, পূর্ববঙ্গ সমস্যার গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করানোর জন্য ইয়াহিয়াকে রাজি করাতে বিশ্বনেতাদের কিছুদিন সময় দেওয়া উচিত।

 

 

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নভেম্বর মাস | ধারাবাহিক পর্ব নভেম্বর ( )

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ১৫ নভেম্বর দিল্লিতে বলেন, দ্রুত বা ক্রোধবশত বাংলাদেশ সম্পকে৴ ভারতের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া অনুচিত। বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে বাংলাদেশ সম্পর্কে তিনি মাত্রই কথা বলে এসেছেন। সমস্যার বিভিন্ন দিক এবং বিপদের আশঙ্কা তিনি তাঁদের বুঝিয়ে বলেছেন।

এদিন সকালে বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ইন্দিরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমেও পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তাঁর বিদেশ সফরে দেশগুলো বাংলাদেশ সংকট আরও ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে।

 

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নভেম্বর মাস | ধারাবাহিক পর্ব নভেম্বর ( )

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দিল্লিতে ১৬ নভেম্বর কংগ্রেসের সংসদীয় দলের কর্মসমিতির সভায় বলেন, মাস দুয়েকের মধ্যেই বাংলাদেশ সমস্যার সমাধান হতে পারে।

অপহৃত দুই চিকিৎসকের লাশ

ঢাকার মতিঝিলে নটর ডেম কলেজের দক্ষিণে সার্কুলার রোডের সেতুর নিচ থেকে এদিন হাত-পা বাঁধা ও বিকৃত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তরুণ চিকিৎসক শহীদ বুদ্ধিজীবী আজহারুল হক ও হুমায়ুন কবীরের লাশ পাওয়া যায়। ১৫ নভেম্বর একদল আলবদর ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের হাকিম হাউসের সামনে থেকে তাঁদের দুজনকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদের নামে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।

পাকিস্তান টাইমস পত্রিকা এক সংবাদে জানায়, ২৭ ডিসেম্বর ইসলামাবাদে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডাকা হবে। অধিবেশন ঢাকায় বসবে বলে স্থির হয়ে ছিল।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব সুলতান মহম্মদ খান ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর দেশ ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে যুদ্ধাবস্থার মোকাবিলা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম রজার্সের সঙ্গে ওয়াশিংটনে দেখা করার পর তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানে ভারতের সেনাসমর্থিত গেরিলাদের অভিযানই উত্তেজনার কারণ। পাকিস্তান সংযত বলেই পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে যাচ্ছে না।

অবরুদ্ধ ঢাকার গভর্নর আবদুল মোত্তালিব মালিক এক বৈঠকে শান্তি সেনা গঠনের সিদ্ধান্ত নেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নভেম্বর মাস | ধারাবাহিক পর্ব নভেম্বর ( )

তিনি নিশ্চিত, বাংলাদেশের শরণার্থীরা তাদের দেশে ফিরে যাবে। ভারতে সফররত যুক্তরাজ্যের বৈদেশিক উন্নয়নমন্ত্রী রিচার্ড উড বোম্বাইয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বর্তমান উত্তেজনা নিরসনে তাঁরা উদ্গ্রীব। যুক্তরাজ্য নিজে অথবা কমনওয়েলথ বা জাতিসংঘের মাধ্যমে উদ্যোগ নিতে ইচ্ছুক।

শহীদ হলেন জগৎজ্যোতি দাস

বীর বিক্রম জগৎজ্যোতি দাস ১৬ নভেম্বর হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জের বদলপুরে শহীদ হন। এলাকাটি মুক্তিবাহিনীর ৩ নম্বর সেক্টরের আওতাভুক্ত হলেও এখানে কিছু যুদ্ধ ৫ নম্বর সেক্টরের বড়ছড়া সাব-সেক্টর থেকে পরিচালিত হতো। ১৫ নভেম্বর জগৎজ্যোতি দাসের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সুনামগঞ্জের টেকেরঘাট থেকে নৌকায় রওনা দিয়ে ১৬ নভেম্বর সকালে বদলপুরে পৌঁছান। তাঁরা জানতে পারেন, রাজাকাররা ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে বসে চাঁদা আদায় করছে। মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালিয়ে যায়। জগৎজ্যোতি দাস কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে তাদের ধাওয়া করেন।

অদূরে জলসুখা গ্রামে ছিল জগৎজ্যোতির বাড়ি। তিনি কয়েকজন সহযোদ্ধাকে নিয়ে সেদিকে রওনা হন; একটি দলকে পাঠান পিটুয়াকান্দি, আরেকটিকে আজমিরীগঞ্জে। ইতিমধ্যে পাকিস্তানি সেনাদের দুটি দল শাল্লা ও আজমিরীগঞ্জ থেকে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ করে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জগৎজ্যোতি জলসুখার বদলে পিটুয়াকান্দি চলে আসেন। সেখানে কয়েক ঘণ্টা যুদ্ধ হয়।

জগৎজ্যোতি তিনজন সহযোদ্ধাকে নিয়ে সামনে এগিয়ে গেলে পাকিস্তানিরা তাঁদের গুলি করে। তিন সহযোদ্ধা শহীদ হন। জগৎজ্যোতির বাঁ পাঁজরে গুলি লাগে। আহত জগৎজ্যোতিকে পাকিস্তানিরা নির্মম অত্যাচারের পর হত্যা করে। পরে আজমিরীগঞ্জ বাজারে তাঁর লাশ খুঁটিতে বেঁধে বিক্ষত করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়।

মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য জগৎজ্যোতিকে বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রীয় পদক দেওয়ার ঘোষণা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়। আকাশবাণীতেও প্রচারিত হয় তাঁর বীরত্বগাথা। স্বাধীনতার পর তাঁকে মরণোত্তর বীর বিক্রম উপাধি দেওয়া হয়।

এদিন পার্বত্য চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা, যশোর ও রংপুর অঞ্চলে মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তানি বাহিনীর মধ্যে তুমুল লড়াই হয়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয়, মুক্তিবাহিনী গত কয়েক দিনে পার্বত্য চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা, রংপুর ও যশোরের বিপুল এলাকা মুক্ত করে সেখানে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসন চালু করেছে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নভেম্বর মাস | ধারাবাহিক পর্ব নভেম্বর ( )

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র লন্ডনে ১৭ নভেম্বর জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর লন্ডন সফরের পর যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ মন্ত্রী স্যার অ্যালেক ডগলাস হোম ইয়াহিয়া খানের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠির বিষয়বস্তু প্রকাশ করা হয়নি। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, গত মার্চ থেকে যুক্তরাজ্য ইসলামাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলেছে।

 

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নভেম্বর মাস | ধারাবাহিক পর্ব নভেম্বর ( )

 

বাংলাদেশের শরণার্থী সমস্যাসংক্রান্ত জাতিসংঘের তৃতীয় কমিটিতে ১৮ নভেম্বর সারা দিন বিতর্কের পর নেদারল্যান্ডস ও তিউনিসিয়া ভারত উপমহাদেশে ওই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আলাদা দুটি খসড়া প্রস্তাব পেশ করে। পাকিস্তানের প্রতি ন্যায়বিচার করা হয়নি, এমন প্রশ্নে পাকিস্তানের প্রতিনিধি আগা শাহি নেদারল্যান্ডসের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন।

তিউনিসিয়ার প্রস্তাবে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং সমঝোতার জন্য বিবদমান দুই পক্ষের কাছে আবেদন জানাতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতিকে অনুরোধ জানানো হয়।

পাকিস্তানে চীনা প্রতিনিধিদল

চীন সরকারের সিনিয়র মন্ত্রী লি সুই চিংয়ের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল ৮ দিনের সফরে ১৮ নভেম্বর ইসলামাবাদে পৌঁছায়। প্রতিনিধিদলের সদস্যরা ইয়াহিয়া খান এবং তাঁর অর্থনৈতিক প্রতিরক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গেও আলোচনা করবেন।

রাওয়ালপিন্ডির এক সংবাদপত্র জানায়, পাকিস্তানে বসবাসরত প্রায় ১ হাজার ৪০০ নাগরিককে ফিরিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্র একটি পরিকল্পনা করেছে। একজন বিদেশি কূটনীতিক বলেন, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ এড়ানো অসম্ভব। জরুরি নয়, এমন কূটনীতিক এবং তাঁদের পরিবারদের অপসারণ করা হচ্ছে।

 

নভেম্বর মাস ১৯৭১ ২ , বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দিবস ভিত্তিক ঘটনাপ্রবাহ

পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থান ও স্বাধিকার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এবং বাঙালি গণহত্যার প্রেক্ষিতে এই জনযুদ্ধ সংঘটিত হয়।  যুদ্ধের ফলে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। পশ্চিম পাকিস্তান-কেন্দ্রিক সামরিক জান্তা সরকার ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে মার্চ রাতে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনা করে এবং নিয়মতান্ত্রিক গণহত্যা শুরু করে।

এর মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী সাধারণ বাঙালি নাগরিক, ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং পুলিশ ও ইপিআর কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়। সামরিক জান্তা সরকার ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলকে অস্বীকার করে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই ডিসেম্বর পশ্চিম পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।

 

 

নভেম্বর মাস ১৯৭১ ২ , বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দিবস ভিত্তিক ঘটনাপ্রবাহ

 

১৯ নভেম্বর ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ৵সভায় বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি এবং মুক্তিবাহিনীকে যথাসম্ভব সাহায্যের জন্য নতুন করে আবার দাবি জানানো হয়। রাজ্যসভায় সিপিআই সদস্য জি এম সরদেশাই বাংলাদেশ সমস্যা পর্যালোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের একটি কমিশন গঠন করার প্রস্তাবসংক্রান্ত একটি খবরের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে সরকারের উদ্দেশে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কমিশন পাঠানোর প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন হলো শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির জন্য ইয়াহিয়াকে চাপ দেওয়া।

রাজ্যসভায় এসএসপির সদস্য রাজনারায়ণ অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর চাপে বাংলাদেশ উপদেষ্টা কমিটিতে কমিউনিস্টদের গ্রহণ করা হয়েছে। এর উত্তরে সরদেশাই বলেন, এই ধরনের বিবৃতি ওয়াশিংটন ও ইসলামাবাদ পছন্দ করবে। রাজ্যসভায় এ নিয়ে বিতর্ক হয়।

নভেম্বর মাস ১৯৭১ ২ , বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দিবস ভিত্তিক ঘটনাপ্রবাহ

 

নিউইয়র্ক টাইমস ২০ নভেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলে, পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে আমৃত্যু সংগ্রাম করে হলেও বাঙালিরা স্বাধীনতা চায়। পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে এবং গ্রামাঞ্চলে ঘুরে সামগ্রিকভাবে এই ধারণাই হয়। করাচি থেকে ম্যালকম ব্রাউন এই প্রতিবেদন পাঠান।

প্রতিবেদনে ব্রাউন বলেন, হোটেল, ব্যাংক, দোকান, বাজার, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস, বিদেশি কনস্যুলেট অফিস—সর্বত্রই রয়েছে মুক্তিবাহিনী। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে জলাভূমি বেশি। সেখানে সেনাদের পক্ষে ঢোকা কঠিন। পাকিস্তানি সেনা কর্তৃপক্ষ ভিয়েতনাম থেকে কিছু শেখেনি।

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

জাতিসংঘে চীন সরকারের প্রতিনিধির করা মন্তব্যে দুঃখ প্রকাশ করে বাংলাদেশ সরকারের একজন মুখপাত্র ২১ নভেম্বর মুজিবনগরে বলেন, শরণার্থীদের ব্যাপারে সামান্য সহানুভূতিও প্রকাশ করেনি চীন। শরণার্থীদের সাহায্যের কথা না বলে ভারতের বিরুদ্ধে বিষোদ্‌গার করেছেন চীনের প্রতিনিধি। তবে বাংলাদেশের মানুষ একটি লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে চলেছে। সেটি হলো মাতৃভূমির মুক্তি।
জাতিসংঘে চীনের প্রতিনিধি পাকিস্তানি নীতিকে সমর্থন করায় ভারতের আহমেদাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, সীমান্তের ঘটনাবলি সম্পর্কে এবং বাংলাদেশের শরণার্থী সমস্যা প্রশ্নে ভারত তার সিদ্ধান্ত নিজেই নেবে।
প্রসঙ্গত, ১৯ নভেম্বর চীনের প্রতিনিধি জাতিসংঘে বক্তব্য দেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নভেম্বর মাস | ধারাবাহিক পর্ব নভেম্বর ( )

যশোরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের চৌগাছায় ২২ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী চৌগাছার বিরাট এলাকা মুক্ত করে যশোর শহরের দিকে এগোয়। পাকিস্তানি বিমান যশোরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে বয়রায় আসামাত্র ভারতীয় বিমানও আকাশে ওড়ে। বিমানযুদ্ধে তিনটি পাকিস্তানি বিমান বিধ্বস্ত হয়। দুই পাইলট খলিল আহমদ খান ও পারভেজ মেহেদি কোরেশি ভারতে বন্দী হন। পাকিস্তানি বাহিনী ১৩টি ট্যাংক, ৩টি বিমান এবং বেশ কিছু সেনা হারিয়ে শার্শার নাভারনে আশ্রয় নেয়। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের পিছু নিয়ে শার্শা সদর পর্যন্ত এগিয়ে গিয়ে সেখানেই ঘাঁটি গাড়ে।

 

ভারতের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনী বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে থাকলে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ২৩ নভেম্বর সারা দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, পাকিস্তান আক্রমণের শিকার হতে পারে, এ আশঙ্কায় ইয়াহিয়া খান দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। পাকিস্তান ও ভারত দুই দেশই সীমান্তে প্রচুর সেনা সমাবেশ করায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ইয়াহিয়া জরুরি অবস্থা ঘোষণা করলেন।

 

নভেম্বর মাস ১৯৭১ ২ , বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দিবস ভিত্তিক ঘটনাপ্রবাহ

 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ২৪ নভেম্বর দেশটির আইনসভার নিম্নকক্ষ লোকসভায় বিরোধী নেতাদের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বীকৃতি নিয়ে বৈঠকে করেন। বিরোধী নেতা গোরে মারারি ইন্দিরা গান্ধীকে বলেন, ৬ ডিসেম্বরের আগেই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। কারণ, ইয়াহিয়া খান সে দিন পাকিস্তানের নতুন সংবিধান চালু করবেন।
পরে লোকসভায় মুক্তিবাহিনীর সাফলে৵র কথা উল্লেখ করে ইন্দিরা বলেন, বর্ষার পর মুক্তিবাহিনীর সাফল্য পাকিস্তানের সামরিক সরকারের সব পরিকল্পনা স্পষ্টত বানচাল করে দিয়েছে।
এ দিন ভারতের কলকাতায় বাংলাদেশের ১৪ জন নাবিক আশ্রয় নেন।

 

জাতিসংঘের বৈঠক ডাকার আহ্বান

যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের কিছু সদস্য ভারত-পাকিস্তান সংকট নিয়ে আলোচনার জন্য অবিলম্বে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডাকার আহ্বান জানান।
সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজধানী মস্কোতে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস এদিন ভারত উপমহাদেশের সংকট নিয়ে সোভিয়েত সরকারের সঙ্গে আলাপ করে। আলোচনার বিবরণ প্রকাশ করা হয়নি।
ভারত ও পাকিস্তানকে সামরিক উদ্যোগ থেকে বিরত থাকার জন্য এই দিন আহ্বান জানায় ফ্রান্স।

ব্রিটেনের দ্য টাইমস পত্রিকায় এক সম্পাদকীয় মন্তব্যে বলা হয়, পাকিস্তানের দুই অংশকে একত্রে রেখে আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।

পাকিস্তানিরা পালানোর পথ খুঁজছে
মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তর থেকে ২৪ নভেম্বর বলা হয়, মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণের সামনে পাকিস্তানি সেনারা দুটি পন্থা নিয়েছে: ১. নির্বাচিত চার-পাঁচটা সেনানিবাসে আত্মরক্ষার জন্য ঘাঁটি গড়ে তোলা। ২. বাংলাদেশ থেকে দ্রুত কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং কিছু সামরিক সরঞ্জাম পাকিস্তানে সরিয়ে নেওয়া। বিমানবাহিনীর কিছু বিমানও তারা পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠিয়ে দিয়েছে।

নভেম্বর মাস ১৯৭১ ২ , বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দিবস ভিত্তিক ঘটনাপ্রবাহ

 

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম রজার্স পৃথকভাবে ভারত ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে এনে তাঁদের দুই দেশের সীমান্ত থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন। এ বিষয়ে ২৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র চার্লস ব্রে বলেন, ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার খবর পাওয়ার পর দুই দেশের কূটনীতিকদের ডেকে আনা হয়। ভারতের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনার সময় উইলিয়াম রজার্স উপমহাদেশের উত্তেজনা প্রশমনে কোনো নতুন প্রস্তাব দেননি।

তবে তিনি দুই দেশকেই সংঘর্ষে না জড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের পূর্ব খণ্ডে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক বাহিনী মোতায়েনেরও কোনো প্রস্তাব করা হয়নি।

নভেম্বর মাস ১৯৭১ ২ , বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দিবস ভিত্তিক ঘটনাপ্রবাহ

সিলেটের কানাইঘাটের দুই মাইল দূরে গৌরীপুরে ২৬ নভেম্বর ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। জেড ফোর্সের প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মুক্তিযোদ্ধারা সিলেট দখলের লক্ষ্যে ২২ নভেম্বর গৌরীপুরে পৌঁছান। কানাইঘাটে অবস্থানরত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের আলফা কোম্পানি তখন তাদের প্রতিরক্ষা অবস্থান ছেড়ে গৌরীপুরে এগিয়ে এসে সুরমা নদীর উত্তর তীরে অবস্থানরত মুক্তিবাহিনীর সামনের চার্লি ও ডেল্টা কোম্পানিকে ঘিরে ফেলে ডেল্টা কোম্পানির ওপর আক্রমণ চালায়।

তারা একই সঙ্গে সুরমার দক্ষিণে অবস্থানরত মুক্তিবাহিনীর আলফা ও ব্রাভো কোম্পানির ওপরও আর্টিলারি ফায়ার ও শেলিংয়ের মাধ্যমে প্রচণ্ড আক্রমণ শুরু
করে। ডেল্টা কোম্পানির ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে পাকিস্তানিরা বারবার তাঁদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানাতে থাকে।

নভেম্বর মাস ১৯৭১ ২ , বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দিবস ভিত্তিক ঘটনাপ্রবাহ

দিনাজপুর অঞ্চলের হিলিতে পাকিস্তানি বাহিনীর শক্ত ঘাঁটি মুক্ত করার জন্য মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর সমন্বিত আক্রমণ ২৭ নভেম্বর তীব্র আকার ধারণ করে। হিলিতে তীব্র লড়াই হয়। রংপুর সেনানিবাস থেকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলাকে বিচ্ছিন্ন করতে যৌথ বাহিনী তিন দিক থেকে আক্রমণ চালায়। তাদের কামানের গোলায় পাকিস্তানিদের পাঁচটি ট্যাংক বিধ্বস্ত হয়। পাকিস্তানি বাহিনীর প্রায় ৮০ জন হতাহত হয়। যৌথ বাহিনীরও ২০ জন হতাহত হন।

সিলেট অঞ্চলে পাকিস্তানি বাহিনীর ঘাঁটি রাধানগর কমপ্লেক্স মুক্ত করার জন্য এদিনও থেমে থেমে যুদ্ধ চলে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৫/৫ গোর্খা রেজিমেন্ট পাকিস্তানি বাহিনীর রাধানগর ও ছোটখেল অবস্থানে আক্রমণ করে। ছোটখেলে তাদের সঙ্গে ছিল জেড ফোর্সের ৩ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ডেল্টা কোম্পানির একটি প্লাটুন। নেতৃত্বে ছিলেন ডেল্টা কোম্পানির অধিনায়ক এস আই এম নুরুন্নবী খান (স্বাধীনতার পর বীর বিক্রম ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল)। তাদের দায়িত্ব ছিল গোর্খা সেনাদের বেরোনোর পথ নিরাপদ রাখা এবং দক্ষিণ দিকের সম্ভাব্য আক্রমণ প্রতিহত করা।

 

Leave a Comment