অক্টোবর মাস ১৯৭১ ১ , বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দিবস ভিত্তিক ঘটনাপ্রবাহ

অক্টোবর মাস ১৯৭১ ১ , বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দিবস ভিত্তিক ঘটনাপ্রবাহ , মুক্তিযুদ্ধ হলো ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত একটি বিপ্লব ও সশস্ত্র সংগ্রাম।

পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থান ও স্বাধিকার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এবং বাঙালি গণহত্যার প্রেক্ষিতে এই জনযুদ্ধ সংঘটিত হয়।  যুদ্ধের ফলে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। পশ্চিম পাকিস্তান-কেন্দ্রিক সামরিক জান্তা সরকার ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে মার্চ রাতে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনা করে এবং নিয়মতান্ত্রিক গণহত্যা শুরু করে।

এর মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী সাধারণ বাঙালি নাগরিক, ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং পুলিশ ও ইপিআর কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়। সামরিক জান্তা সরকার ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলকে অস্বীকার করে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই ডিসেম্বর পশ্চিম পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।

 

অক্টোবর মাস ১৯৭১ ১ , বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দিবস ভিত্তিক ঘটনাপ্রবাহ

 

Table of Contents

অক্টোবর মাস ১৯৭১ ১ , বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দিবস ভিত্তিক ঘটনাপ্রবাহ

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রাভদার অবস্থান – ১০ অক্টোবর

 

অক্টোবর মাস ১৯৭১ ১ , বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দিবস ভিত্তিক ঘটনাপ্রবাহ

 

সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা প্রাভদা ১০ অক্টোবর বাংলাদেশের ঘটনাবলির বিস্তারিত বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান নেয়। প্রতিবেদনে প্রাভদা বলে, পূর্ববঙ্গে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্যাপক ও নৃশংস গণহত্যার দায় এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল হিসেবে পাকিস্তানের প্রশাসন শেখ মুজিবুর রহমানের বিচারের তামাশা করছে। সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের পরিবর্তে পাকিস্তান সরকার অনৈতিক কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করছে।

প্রাভদা জানায়, ন্যায়বিচার লঙ্ঘিত হওয়ায় সোভিয়েত জনগণ বিক্ষুব্ধভাবে এর প্রতিবাদ করছে। তারা শেখ মুজিবুর রহমানের অবিলম্বে মুক্তি, পূর্ববঙ্গের রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান এবং শরণার্থীদের নিরাপদে দেশে প্রত্যাবর্তনেরও দাবি করছে।

 

অক্টোবর মাস ১৯৭১ ১ , বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দিবস ভিত্তিক ঘটনাপ্রবাহ

 

অক্টোবর মাস ১৯৭১ ১ , বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দিবস ভিত্তিক ঘটনাপ্রবাহ

 

মিসরের সংবাদপত্র আল আহরাম­-এ ১২ অক্টোবর এক নিবন্ধে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ইয়াহিয়া খানের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছেন যে বিচারের ফল যা-ই হোক না কেন, শেখ মুজিবুর রহমানকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলানো হবে না। পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং নিবন্ধ লেখক ড. ক্লোভিমা ম্যাক সাঈদ বিশ্বাসযোগ্য একটি পাকিস্তানি সূত্র থেকে এ তথ্য পেয়েছেন বলে জানান।

ইয়াহিয়া খান এই দিন এক বেতার ভাষণে ২৭ ডিসেম্বর জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান এবং শাসনতন্ত্র প্রকাশের কথা ঘোষণা করেন। অধিবেশনের পরপরই তিনি কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করবেন এবং পরিষদ খসড়া শাসনতন্ত্র নিয়ে আলোচনা শুরু করবে। তিনি বলেন, ভারত শিগগিরই পাকিস্তানকে আক্রমণ করবে মনে হচ্ছে। তবে তাঁর বাহিনী সম্পূর্ণ সজাগ এবং সতর্ক রয়েছে।

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

দুঃসাহসী কিশোর বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক কঠোর সেনা প্রহরা পেরিয়ে ১৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক গভর্নর আবদুল মোনেম খানের ড্রয়িংরুমে ঢুকে তাঁকে গুলি করেন। গুলিবিদ্ধ মোনেম খান রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। ঘটনাটি প্রচণ্ড আলোড়ন সৃষ্টি করে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মোনেম খানের বনানীর বাড়ি পাহারার দায়িত্ব পড়ে বালুচ রেজিমেন্টের একটি দলের ওপর। বাড়ির মুখে বাংকার বানিয়ে তারা পাহারা দিত।

 

ছাতকে দুঃসাহসী সম্মুখযুদ্ধ – ১৪ অক্টোবর

অক্টোবর মাস ১৯৭১ ১ , বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দিবস ভিত্তিক ঘটনাপ্রবাহ

 

১৪ অক্টোবর সুনামগঞ্জের ছাতকে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর শক্তিশালী একটি দলের সঙ্গে সাহসিকতাপূর্ণ এক সম্মুখযুদ্ধে লিপ্ত হন।

ছাতকের ওপর দিয়ে প্রবাহিত সুরমা নদীর পশ্চিম তীরে ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি। নদীতীরে গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দর। ছাতক শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে সিলেট শহর। ছাতক শহর ও সিমেন্ট ফ্যাক্টরি ঘিরে ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর শক্ত প্রতিরক্ষা অবস্থান। এই পুরো এলাকায় ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের এক কোম্পানি সেনা। সঙ্গে ১২ আজাদ-কাশ্মীর ফোর্স (একেএফ), ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্স (ইপিসিএএফ) এবং রাজাকারদের দুই কোম্পানি শক্তিসমান জনবল।

 

সেনাসমাবেশের কথা স্বীকার ইয়াহিয়ার – ১৫ অক্টোবর

 

অক্টোবর মাস ১৯৭১ ১ , বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দিবস ভিত্তিক ঘটনাপ্রবাহ

 

ইরানে রাজতন্ত্রের আড়াই হাজার বছর পূর্তি উপলক্ষে সেখানে সফররত পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৫ অক্টোবর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট নিকোলাই পদগোর্নি, যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটো এবং রুমানিয়ার প্রেসিডেন্ট নিকোলাই চসেস্কুর সঙ্গে তেহরানের পারসি প্যালেসে আলাদা আলাদা বৈঠক করেন। তাঁরা সবাই উৎসবে যোগ দিতে তেহরানে যান। নিকোলাই পদগোর্নির সঙ্গে ইয়াহিয়া প্রায় দুই ঘণ্টা আলোচনা করেন। পদগোর্নির কাছে তিনি ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সেনাসমাবেশের কথা স্বীকার করে বলেন, আত্মরক্ষার জন্যই তিনি এসব করেছেন।

মুক্তিবাহিনী এখন ভীষণ মারমুখী – ১৬ অক্টোবর

অক্টোবর মাস ১৯৭১ ১ , বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দিবস ভিত্তিক ঘটনাপ্রবাহ

মুজিবনগরে বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তরের একজন মুখপাত্র ১৬ অক্টোবর দেশি-বিদেশি সাংবাদিকের জানান, মুক্তিবাহিনীর পূর্ণ ও স্বল্প প্রশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধারা এখন ভীষণ মারমুখী। শুধু গেরিলা লড়াই, অ্যামবুশ বা চোরাগোপ্তা গুলি চালানো নয়, সম্মুখসমরের জন্যও তাঁরা তৈরি। প্রতিটি সেক্টরেই মুক্তিবাহিনী সক্রিয় হয়ে উঠেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পাকিস্তানিরা হারছে। মুক্তিযোদ্ধারা উড়িয়ে দিচ্ছেন রেললাইন ও সেতু। পাকিস্তানি সেনাবাহী ট্রেনের ওপর নিয়মিত আঘাত হানছে। বিভিন্ন স্থানে এতটাই তাঁদের সফলতা যে পাকিস্তানি সেনারা ট্রেনে চড়তে ভয় পাচ্ছে। রাতে কোনো ট্রেন চলছে না।

মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তর থেকে আরও দুটি খবর দেওয়া হয়। একটি হলো বঙ্গবন্ধুর নামে মুক্তিবাহিনীর নিজস্ব নৌবহর সংগঠিত হয়েছে। আপাতত তাতে আছে পাকিস্তানি বাহিনীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া পাঁচটি মোটর বোট। দ্বিতীয়টি হলো, বাংলাদেশের বিমান সেনা ও বৈমানিকদের নিয়ে বিমান ইউনিট গঠন। আগে এঁরা পাকিস্তান বিমানবাহিনী এবং পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ইউনিটের জন্য বিমান সংগ্রহ করা হয়েছে। এখন চলছে প্রশিক্ষণ।

অক্টোবর মাস ১৯৭১ ১ , বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দিবস ভিত্তিক ঘটনাপ্রবাহ

দিল্লিতে একটি কূটনৈতিক সূত্র ১৭ অক্টোবর সাংবাদিকদের জানায়, ভারতের বিরুদ্ধে কোনো হঠকারী সামরিক অভিযানের ব্যাপারে সোভিয়েত ইউনিয়ন পাকিস্তানকে কঠোরভাবে সতর্ক করে দিয়েছে। তেহরানে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট নিকোলাই পদগোর্নির সঙ্গে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাম্প্রতিক বৈঠকের সময় সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট এই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন।

ইরানে রাজতন্ত্রের আড়াই হাজার বছর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তাঁরা তেহরানে গিয়েছিলেন।

অক্টোবর মাস ১৯৭১ ১ , বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দিবস ভিত্তিক ঘটনাপ্রবাহ

 

বিখ্যাত ফরাসি দৈনিক লা মঁদ পত্রিকায় ১৮ অক্টোবর প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বলেন, জনগণ যদি শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য মার্জনা চায়, তাহলে তিনি তা মঞ্জুর করবেন। লা মঁদ-এর সাংবাদিক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে প্রশ্ন করেছিলেন, যে সামরিক ট্রাইব্যুনাল গোপনে শেখ মুজিবের বিচার করছে, তারা যদি তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেয়, তাহলে প্রেসিডেন্ট তাঁর মার্জনা করার অধিকার প্রয়োগ করবেন কি না। প্রশ্নের উত্তরে ইয়াহিয়া ওই কথা বলেন।

আরেক প্রশ্নের জবাবে ইয়াহিয়া বলেন, সামরিক আদালত শেখ মুজিবকে নিরপরাধ ঘোষণা না করা পর্যন্ত তিনি একজন বিদ্রোহীর সঙ্গে কথা বলতে পারেন না। তিনি অভিযোগ করেন, ভারত পাকিস্তানকে হুমকি দিচ্ছে।

আরও দেখুনঃ 

Leave a Comment